
বর্তমানে জাতীয় রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু দুটি- নির্বাচন ও সংস্কার। এই দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে দেশে যেমন রাজনৈতিক উত্তেজনা বেড়েছে, তেমনি সাধারণ মানুষের মাঝেও দেখা দিয়েছে নানা শঙ্কা ও কৌতূহল। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের তত্ত্বাবধানে চলমান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে— এই আলোচনা কতটা কার্যকর হবে এবং আদৌ কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব কি না তা নিয়েও দেখা দিয়েছে চতুর্ভুজ সংকট।
৫ আগস্টের পর দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। বিশেষ করে, ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন, দেশবাসীকে নতুনভাবে রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখতে কেন্দ্রীভূত করেছে। এ সরকারের প্রধান অঙ্গীকার ছিল একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা এবং স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় সংস্কার বাস্তবায়ন।
এই লক্ষ্যে গঠিত হয়েছে একাধিক সংস্কার কমিশন, যেগুলোর অধিকাংশই এরই মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের সুপারিশসমূহ সংকলন করে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছে এবং তাদের মতামত চেয়েছে। বেশ কয়েকটি দল ইতোমধ্যে তাদের মতামত প্রদান করেছে, যদিও কেউ কেউ প্রশ্নোত্তর আকারে মতামত চাওয়া নিয়ে আপত্তিও তুলেছে।
এটি ঠিক যে সব রাজনৈতিক দল সব বিষয়ে একমত হবে না— গণতন্ত্রের সৌন্দর্য এখানেই। মতভেদ থাকবেই, কারণ ভিন্ন আদর্শ ও চিন্তাধারার ওপরই গড়ে উঠেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তবে নির্বাচন করতে গিয়ে সংস্কারকে পাশ কাটানো যেমন অবাঞ্ছনীয়, তেমনি সংস্কারের অজুহাতে নির্বাচন বিলম্বিত করাও গ্রহণযোগ্য নয়।
উল্লেখ্য, অনেক সংস্কার সুপারিশ সরাসরি নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এবং সেগুলো সরকার নির্বাহী আদেশেই বাস্তবায়ন করতে পারে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন— এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারকে দৃশ্যমান কার্যক্রম নিতে দেখা যাচ্ছে না। এটি সরকারের সদিচ্ছা এবং কার্যক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। সংস্কারের প্রশ্নে যদি সরকার কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থে নতি স্বীকার করে অথবা নিষ্ক্রিয় থাকে, তবে তা হবে রাষ্ট্রের জন্য হতাশাব্যঞ্জক।
এদিকে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি মাঠের রাজনীতিও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্যে একে অপরকে আক্রমণ, কখনো শালীনতার সীমা লঙ্ঘন— সবকিছু মিলিয়ে রাজনীতিতে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, যা দেশের সাধারণ মানুষকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
সরকারের মতামত অনুযায়ী বিশ্লেষকরা বলছে, সংস্কার ও নির্বাচন দুটি একসঙ্গে কার্যকর বা সমঝোতা আদৌ সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা। এই শঙ্কা কেবল তাদের একার নয়; দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে উদ্বিগ্ন সাধারণ নাগরিকরাও।
এতে কোনো সন্দেহ নেই, নির্বাচনী অনিশ্চয়তা দেশের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিনিয়োগ, ব্যবসা, শ্রমবাজার— সবখানেই এর ছায়া পড়েছে। অতএব, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি সর্বসম্মত রোডম্যাপ তৈরি করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করা।
নির্বাচন ও সংস্কার— এই দুটি বিষয়কে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং সহায়ক হিসেবে দেখাটাই হবে যথার্থ। এ দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য রেখে এগোতে না পারলে দেশের গণতন্ত্র ও অগ্রগতি দুটোই চরম ঝুঁকির মুখে পড়বে। সময় এখনও হাতে আছে— প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছা, সাহসী নেতৃত্ব এবং সবার অংশগ্রহণ।
জুবায়ের দুখু
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্ত ব্যক্তিগত। সীমান্ত টিভি কর্তৃপক্ষ এর জন্য দায়ী নয়।
মন্তব্য লিখুন
আরও খবর
গরিব জনগোষ্ঠির পক্ষে রাজনীতি করুন; গরিবের জন্য ‘গরিব...
গরিব জনগোষ্ঠির পক্ষে রাজনীতি করুন; গরিবের...
“পুরুষ” ও “নারী” এ দুটি লিঙ্গ ব্যতীত আমেরিকাতে...
“পুরুষ” ও “নারী” এ দুটি লিঙ্গ...
খুনিরা ‘৭৫ এ খুন করেছিল; ২৪ এ ব্যর্থ...
খুনিরা ‘৭৫ এ খুন করেছিল; ২৪...
নভেম্বরে এলো ২৬ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স
নভেম্বরে এলো ২৬ হাজার কোটি টাকার...
নভেম্বরে এলো ২৬ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স
নভেম্বরে এলো ২৬ হাজার কোটি টাকার...
নভেম্বরে এলো ২৬ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স
নভেম্বরে এলো ২৬ হাজার কোটি টাকার...