নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের বার্ষিক বনভোজন অনুষ্ঠিত

জোহরা আজিন মাহাথীর: বৃষ্টিভেজা এক স্নিগ্ধ সকালে নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসের গ্লেন আইল্যান্ড পার্ক যেন সেদিন হয়ে উঠেছিল এক টুকরো বাংলাদেশ।

১৪ জুন (শনিবার) নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের বার্ষিক বনভোজন অনুষ্ঠিত হয় এক অনন্য আনন্দঘন পরিবেশে—যেখানে মিলিত হয়েছিলেন প্রবাসী সাংবাদিক, তাঁদের পরিবার, বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা, ব্যবসায়ী, শিল্প উদ্যোক্তা এবং আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ। এই বনভোজন ছিল শুধু একটি বিনোদনের দিন নয়, বরং প্রবাসী জীবনের এক হৃদয়স্পর্শী মিলনমেলা, একে অপরের সান্নিধ্যে কিছু মুহূর্ত কাটানোর প্রাণবন্ত উপলক্ষ।
দিনটি শুরু হয় মেঘলা আকাশ আর হালকা বৃষ্টির সঙ্গে, ঠান্ডা বাতাস যেন চারদিকে ছড়িয়ে দিয়েছিল এক রোমাঞ্চকর আমেজ। সকালের এমন বৈরী আবহাওয়া সত্ত্বেও দুপুর গড়াতেই প্যাভিলিয়ন-২ এ শতাধিক অতিথির আগমন শুরু হয়। সাংবাদিকদের পাশাপাশি তাদের পরিবার, শিশুরা, বয়োজ্যেষ্ঠরাও একে একে এসে যোগ দেন আনন্দ আড্ডায়।

অতিথিদের স্বাগত জানান প্রেসক্লাবের সভাপতি মনোয়ারুর ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মমিন মজুমদারসহ কার্যকরী কমিটির সদস্যবৃন্দ।
সকালের নাস্তার তালিকায় ছিল, কফি, চা এবং ডনাট একেবারে বাংলার ঘ্রাণ মাখা পরিবেশনে। এরপর শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। ক্লাবের অন্যতম উপদেষ্টা ও সাপ্তাহিক বাংলাদেশ-এর উপদেষ্টা সম্পাদক আনোয়ার হোসাইন মঞ্জু প্রেসক্লাবের ‘ভয়েস’ শীর্ষক স্যুভেনির উন্মোচন করেন আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে। তারপর একগুচ্ছ বেলুন উড়িয়ে বনভোজনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান এবং সাবেক সভাপতি, সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা সম্পাদক ও টাইম টেলিভিশনের সিইও আবু তাহের।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ক্লাবের সহ-সভাপতি শেখ সিরাজুল ইসলাম, যিনি হাস্যরস, আবেগ ও পেশাদারিত্বের সংমিশ্রণে পুরো অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত করে তোলেন। ফাঁকে ফাঁকে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন আমন্ত্রিত সম্পাদক, সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা—সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের অধ্যাপক ড. এসএম শামীম রেজা, সাপ্তাহিক প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ, সিনিয়র সাংবাদিক শওকত ওসমান রচি, সাপ্তাহিক প্রথম আলো’র নির্বাহী সম্পাদক মঞ্জুরুল হক, টিবিএন২৪-এর বিশেষ প্রতিনিধি শামীম আহমেদ, জুয়েল আহসান, সাপ্তাহিক জেমিনি সম্পাদক বেলাল আহমেদ, বাপস সম্পাদক হাকিকুল ইসলাম খোকন, সাপ্তাহিক সাদাকালো’র নির্বাহী সম্পাদক মোহাম্মদ কাশেম, সাপ্তাহিক আজকাল-এর জেনারেল ম্যানেজার আবু বকর সিদ্দিক, ইউএসএনিউজঅনলাইন.কম সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সেলিম এবং সিনিয়র সাংবাদিক মাহাথীর খান ফারুকী, যিনি প্রেসক্লাবের একজন উদীয়মান সদস্য হিসেবে তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশাবাদ ব্যক্ত করেন অতিথিরা।

ক্লাবের সদস্য ও উপদেষ্টাদের মধ্যেও বক্তব্য রাখেন ডা. চৌধুরী সারোয়ারুর হাসান, মাহমুদ খান তাসের, এবিএম সালেউদ্দিন, ইব্রাহীম চৌধুরী খোকন, ড. ইমরান আনসারী, হাসানুজ্জামান সাকী, সুলতানা রহমান, মেহেরুননেসা জোবায়দা, জামিল আনসারী, ফাহমিদা লিনা, শেখ শফিকুর রহমান ও শরিফুল ইসলাম।

কমিউনিটির আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুল রহিম হাওলাদার, ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য ও জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির সভাপতি ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য আতোয়ারুল আলম, সহ-সভাপতি কামরুজ্জামান কামরুল, সাহিত্য সম্পাদক হাসান জিলানী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অনিক রাজ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক আলহাজ সোলায়মান ভূঁইয়া, আব্দুস শহীদ, মুনা সোস্যাল সার্ভিস-এর চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল আলীফ, বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাডভোকেসি গ্রুপ (বাগ)-এর সভাপতি জয়নাল আবেদীন, জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকার সাধারণ সম্পাদক রোকন হাকিম, নিউইয়র্ক বাংলাদেশি লায়ন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মজুমদার, পার্কচেস্টার রিয়ালটির কর্ণধার সালেহউদ্দিন সাল, কুমিল্লা সোসাইটি ইউএসএ’র সাবেক সভাপতি খবির উদ্দিন, এস্টোরিয়া ডিজিটাল ট্রাভেলস-এর নজরুল ইসলাম, গ্রী মেকানিক্যাল ইয়ংকার্স-এর তোফায়েল চৌধুরী লিটন, জাকির চৌধুরী সিপিএ, শেফ খলিলুর রহমান, রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর নূরুল আজীম, নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ইউএসএ’র আশরাফুজ্জামান, বগুড়া সমিতি ইউএসএ’র সভাপতি মোহব্বত আকন্দ, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট আব্দুস সবুর, আমীন মেহেদী, আহসান হাবীব, পারভেজ সাজ্জাদ, বদরুদ্দোজা সাগর, আব্দুর রশীদ বাবু, শিপন এবং নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী জোহরান মামদানীর ক্যাম্পেইন প্রতিনিধি ফারিহা আক্তার।শিশুরা খেলাধুলায় ব্যস্ত, প্রাপ্তবয়স্করা গান ও আড্ডায়, যেন বাংলাদেশে ঈদের দিনে গ্রামের উঠানে বসে আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো নতুন করে ফিরে এলো।গান পরিবেশন করে দর্শকদের হৃদয় জয় করে নেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মরিয়ম মারিয়া। তার গাওয়া দেশাত্মবোধক ও জনপ্রিয় বাংলা গানগুলোতে অংশগ্রহণকারীরা গলা মিলিয়ে গেয়ে ওঠেন।

সবশেষে ছিল বহুপ্রতীক্ষিত র‍্যাফেল ড্র। বিভিন্ন উপহার যেমন ফোন, ল্যাপটপ, টিভি, কিচেন অ্যাপ্লায়েন্স, ট্যাবলেট ইত্যাদি বিজয়ীদের হাতে তুলে দেয়া হয়। করতালি আর হর্ষধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো পার্ক।
এই বনভোজন ছিল কেবল একটি দিনে ঘটা একটি অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি ছিল এক প্রবাসী বাংলার উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি একসাথে থাকা, একসাথে হাসা, গান গাওয়া আর দেশকে মনে করে উদযাপনের এক উজ্জ্বল নিদর্শন।

আয়োজকগণ অনুষ্ঠানের সফল সমাপ্তি ও সবার অংশগ্রহণের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে আয়োজনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এই ছিল নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের বার্ষিক বনভোজন ২০২৫, বৃষ্টিমাখা এক দিনে উষ্ণ ভালোবাসা আর দেশীয় আবেগে মোড়ানো এক অভূতপূর্ব মিলনের গল্প।