
হাসিনার “রাষ্ট্রদ্রোহী” সাংবাদিক; ইউনূসের “খুনি” সাংবাদিক -পার্থক্য কোথায়? তফাৎ কি?
মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের কৌশল সরকারের নিয়মিত চর্চা। সরকারের বিচার ও শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সব ধরনের অপকৌশল যেভাবে সরকার নিয়ে থাকে, চতুর্থ স্তম্ভ মিডিয়া বা গণমাধ্যমকে সমান গুরুত্ব দিয়ে কব্জায় রাখে সরকার। বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ প্রচ্ছন্নভাবে সাগর রুনি হত্যার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। পর্যায়ক্রমে সাংবাদিকদেরকে সরকার বিরোধীতার নামে দেশ বিরোধীতার তকমা লাগিয়ে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ মামলা দিয়ে সাংবাদিকদের নতজানু করে রাখার কৌশল নেয়া হয়। উদ্যোগ নেওয়া হয় ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্ট’ বিধি মালায় সাংবাদিকদের হাত পা বেঁধে ফেলতে। পাশাপাশি দলবাজ, তেলবাজ, নতজানু ও আত্মমর্যাদাহীন পরাধীন সাংবাদিক গোষ্ঠী সকলকে সরকার এমনিতেই সহায়ক শক্তি হিসেবে পেয়ে যায়।বাকি রইল অর্থে দুর্বল, স্বার্থে দুর্বল,ভিতু, জ্ঞানহীন চাকুরীজীবী সাংবাদিক; যারা চাকরির হারানোর ভয়ে রাতে ঘুমাতে যান এবং জেগে ওঠেন চাকরি টিকিয়ে রাখতে দিনভর চেষ্টায় রত থাকেন।
এইতো গণমাধ্যম একদম নিয়ন্ত্রণে । ইদানিং নতুন একটা কৌশল ইউনুস সরকার রপ্ত করেছে; বেশ কার্যকর তা হলো ‘খুনের মামলা’। তথা সাংবাদিকরা কথা না শুনলেই তাকে ‘খুনী’ বানিয়ে দাও। ব্যাংক হিসাব জব্দ করো, সাংবাদিকতার লাইসেন্স বাতিল, সংগঠন থেকে বহিষ্কার, ধরে মেরে আর্মি পুলিশকে সঁপে দাও, আরো নানাবিধি কৌশল বাস্তবায় চলছে।
আর হাসিনার আমলে অপকৌশল গুলোতো উত্তরাধিকার সূত্রে চলছে। আমাদের স্পষ্ট কথা সাংবাদিকরা খুনি নয়, খুনের অভিযোগ থেকে সাংবাদিকদের অব্যাহতি দিন দয়া করে।
দুর্নীতির দমন কমিশন (দুদক) সাংবাদিকদের অবৈধ অর্থের অনুসন্ধান করতেই পারেন। খতিয়ে দেখতেই পারেন সাংবাদিকদের আয় বহির্ভূত অর্থ ও সম্পদ আছে কিনা। কিংবা কোন অজানা উৎস থেকে অর্থ আসছে কিনা বা অন্য কারো অর্থ সম্পদ পাচারে সহায্য করছে কিনা। সম্প্রতি একজন উপদেষ্টার অবৈধ অর্থ প্রবাসী বাংলাদেশী আমেরিকান দুজন সাংবাদিক ম্যানেজ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আবার ইউনুস সরকারের পক্ষে অন্ধ সমর্থন সাংবাদিক গোষ্ঠী তৈরীর লক্ষণ স্পষ্ট। একজন ছাত্র সংগঠক ইতিমধ্যে মন্তব্য করেছেন সাংবাদিকদের কলম ভেঙে দেওয়া হবে। এই ছাত্র সংগঠকই সাংবাদিকদের কলম ভেঙে দেওয়া হবে বলে প্রত্যক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণের এবং অনুগত থাকার হুমকি দিচ্ছে। যা একেবারেই সাংবাদিক সমাজের স্বাধীনতা এবং বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার পরিপন্থী। এই ছাত্র সংগঠক কে ইউনুস সরকার অস্পষ্টভাবে সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছে যা সাংবাদিকদের তথা গণমাধ্যমের জন্য হুমকি স্বরূপ। আর এই হুমকি মুক্তিযুদ্ধের বিশ্বাসী সাংবাদিকদেরই মূলত দেওয়া হচ্ছে। ইদানিং সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আবারো সাংবাদিক এবং সংবাদ নিয়ন্ত্রণের জন্য হুমকি প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত এবং শাসন করা শুরু করেছে।
দলবাজ সাংবাদিক যেমন পরিত্যাজ্য; অপেশাদার সংবাদ কর্মীও অগ্রহণযোগ্য। চাটুকার সুবিধাবাদী সাংবাদিকতা যেমন বর্জনীয়; তেমনি নতুন চেতনার নামে সুশীল পদলোভী সাংবাদিকতা ও প্রশ্নবিদ্ধ। ‘সাংবাদিক’ সাংবাদিকতায় পূর্ণ মননিবেশ করাই পেশাদারিত্ব; যত বড় সরকারি পদের প্রস্তাবনাই দেয়া হোক না কেন? তা বর্জনের মধ্যেই “চতুর্থ স্তম্ভ” গণমাধ্যম সংরক্ষিত থাকবে।
লেখক – সাংবাদিক মাহাথীর খান ফারুকী
মন্তব্য লিখুন
আরও খবর
বুয়েট এলামনাই এসোসিয়েশন নিয়ে আমার কিছু ক্ষুদ্র চিন্তা...
বুয়েট এলামনাই এসোসিয়েশন নিয়ে আমার কিছু...
গণঅভ্যুত্থানই প্রকৃত গণতন্ত্রের প্রতিচ্ছবি—দেশের নেতৃত্ব প্রফেসর ইউনুসের হাতেই...
গণঅভ্যুত্থানই প্রকৃত গণতন্ত্রের প্রতিচ্ছবি—দেশের নেতৃত্ব প্রফেসর...
রাজনৈতিক সমর্থন ও নাগরিক অধিকার: আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি?
রাজনৈতিক সমর্থন ও নাগরিক অধিকার: আমাদের...
“পরাধীন গণঅভ্যুত্থান” কাঙ্খিত সফলতা আনতে পারে না
“পরাধীন গণঅভ্যুত্থান” কাঙ্খিত সফলতা আনতে পারে...
নভেম্বরে এলো ২৬ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স
নভেম্বরে এলো ২৬ হাজার কোটি টাকার...
নভেম্বরে এলো ২৬ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স
নভেম্বরে এলো ২৬ হাজার কোটি টাকার...