
বিদেশি শক্তির সাহায্য নিয়ে “পরাধীন গণঅভ্যুত্থান” কাঙ্খিত সফলতা আনতে পারে না। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের নগদ প্রথম ফসল হাসিনার শাসনামলের আপাতত সমাপ্তি, হাসিনা শাসনামলে ক্ষতিগ্রস্ত দল ও ব্যক্তি সকল ক্ষতি থেকে আপাতত বেঁচে গেছেন; তা অভ্যুত্থানের দ্বিতীয় নগদ প্রাপ্তি।
এ দুটি সফলতা কিছু রাজনৈতিক দল ও দলবাজ পেশাদার কিছু গুষ্ঠির সুবিধা বেড়েছে। যা মোট জনগোষ্ঠীর খুবই সামান্য অংশ।
আপামর জনতার ক্ষুধা নিবারণ, আইন বিচার শাসনের সার্বজনীন অধিকার অর্জন, রাজনৈতিক দলের চাপিয়ে দেওয়া দলীয় এজেন্ডা থেকে মুক্তি কিন্তু মেলেনি, কোটি কোটি ছাত্র, জনতা, পেশাদার কৃষক, শ্রমিক, সেনা মানুষের। আপাতত ০৭ (সাত) মাসের শাসনেও দেখা যাচ্ছে না কাংখিত বৈষম্যহীন সমাজ। এখন পরাধীন অভ্যুত্থান কেন বলছি ব্যাখ্যা করছি। দেখুন সরকার পরিবর্তন একটি চলমান প্রশাসনিক প্রক্রিয়া। যখন সরকার যথাযথ প্রক্রিয়া না মেনে বা জনগন বা রাজনৈতিক দলকে পাশকেটে ক্ষমতায় থেকে যেতে চাই তখন সরকার পরিবর্তনের ইস্যু আসে।
আন্দোলন, ভাঙচুর, অবরোধ, হত্যাযজ্ঞ করে; সরকার ও বিরোধী দল গুলো অবশেষে সরকার পরিবর্তনের ইস্যুতে ঐক্যমত্যে পৌঁছে। এটি চলমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা। যখন সরকার বা সরকার প্রধানকে সরিয়ে দেয়া বা হত্যা করার উদ্দেশ্যে বিদেশি এজেন্সির অর্থ, কূটনৈতিক চাল, অস্ত্র, চড়দের ব্যাপকহারে ব্যবহার করবেন এবং ব্যবহার করতে সুযোগ দিবেন তখন বিদেশি এজেন্সিগুলো কিছু চাওয়া পাওয়া বা এজেন্ডা থাকে; সরকার পরিবর্তনের পর বিদেশী শক্তি তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবেই।অথবা ছলে বলে কৌশলে তারা দেশের অভ্যন্তরে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে মরিয়া হয়ে ওঠে।যে কারণে ‘পরাধীন অভ্যুত্থান’ সংশ্লিষ্ট দেশে স্বাধীন সার্বভৌম সরকার প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না সাধারণত। ইউনুস সরকারও সেই বেড়াজালে আড়ষ্ট হয়ে আছে। স্বতস্ফুর্ত স্বাধীন সরকার এটি নয়।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেন ডেমোক্রেট সরকার পরিবর্তনে ইউনুস সরকার দুর্বল হয়ে পড়েছেন। আরো দুর্বল হয়ে পড়েছেন দেশের অভ্যন্তরে কিছু বিভ্রান্ত ইসলামী রাজনৈতিক দল বা সংগঠনগুলোর নৈরাজ্যকর কর্মসূচি ইসলামের দলীয় সংকীর্ণ ব্যাখ্যা এক রকম ইমেজ সংকটে ফেলে দিয়েছে। তৃতীয় দিক হল ‘মুক্তিযুদ্ধে’ স্বাধীন দেশকে যথাযত মর্যাদা দিতে ব্যর্থ হওয়া। ইদানিং ইউনুস সরকারের মাস্টারমাইন্ড মিস্টার আলম এখন মুক্তিযুদ্ধে সময়কালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভাবছেন, এই ভেবে তিনি স্টেটাস দিয়েছেন।ইউনুস সরকার শপথ নেওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বীকৃতি না দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন মিস্টার মাহফুজ, এখন তিনি ভিন্ন কথা বলছেন।
উপরোক্ত বিবেচনায় বাংলাদেশে ইউনুস সরকারে যে বিদেশি মদদ স্পষ্ট ছিল তা বুঝতে অনেকটাই সহজ হয়ে গেছে। জামায়াত ইসলামি অন্যান্য অপরাপর ইসলামিক রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনগুলোকে ঐক্যের যে আহ্বান জানিয়েছিলেন তা ঠিক জামায়াতের মত জুতসই হচ্ছে না। ইসলামিক সংগঠন ও দলগুলো যারা রাষ্ট্র ক্ষমতা লাভ করতে চান তারা ঠিক আস্থা নিতে পারছেন না এই ঐক্যের আহবানে জামায়াতের নেতৃত্বে। বিদেশী শক্তির মদদে জামায়াতে ইসলামি ছদ্মবেশে আন্দোলনের যে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের জন্য তা ঠিক আপাতত সফলতার মুখ দেখা যাচ্ছে না। তাই পরাধীন গনঅভ্যুত্থান তাদের ঠিক কাজে লাগছে না। বিএনপি সহ অপরাপর অনেক দল ইউনুস সরকারকে ঠিক নিরপেক্ষ মনে করছেন না।
পক্ষপাতদুষ্ট এই ইউনুস সরকার একটি বিদেশি গোষ্টীর মদদে এজেন্সি খুলে বসেছেন এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। যার কারণে সংবিধান সংশোধন করে বিচার বিভাগের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে এনে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন এর মধ্য দিয়ে একটি রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায়নই এখন সময়ের দাবি।
সিনিয়র সাংবাদিক মাহাথীর খান ফারুকী
প্রকাশিত মুক্ত কলাম লেখকের একান্ত ব্যক্তিগত। সীমান্ত টিভি কর্তৃপক্ষ এর জন্য দায়ী নয়।
মন্তব্য লিখুন
আরও খবর
বুয়েট এলামনাই এসোসিয়েশন নিয়ে আমার কিছু ক্ষুদ্র চিন্তা...
বুয়েট এলামনাই এসোসিয়েশন নিয়ে আমার কিছু...
গণঅভ্যুত্থানই প্রকৃত গণতন্ত্রের প্রতিচ্ছবি—দেশের নেতৃত্ব প্রফেসর ইউনুসের হাতেই...
গণঅভ্যুত্থানই প্রকৃত গণতন্ত্রের প্রতিচ্ছবি—দেশের নেতৃত্ব প্রফেসর...
রাজনৈতিক সমর্থন ও নাগরিক অধিকার: আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি?
রাজনৈতিক সমর্থন ও নাগরিক অধিকার: আমাদের...
সাংবাদিকরা “রাষ্ট্রদ্রোহী” নয়” খুনি’ নয়
সাংবাদিকরা “রাষ্ট্রদ্রোহী” নয়” খুনি’ নয়
নভেম্বরে এলো ২৬ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স
নভেম্বরে এলো ২৬ হাজার কোটি টাকার...
নভেম্বরে এলো ২৬ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স
নভেম্বরে এলো ২৬ হাজার কোটি টাকার...